ভুয়া ছবির মুখোশ উন্মোচন
___________________________
কার স্বার্থে মিথ্যা প্রচারনায় নামছেন আপনি?
আপনিই বার্মার গণহত্যার মিথ্যা ছবি শেয়ার করে এদেশে একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধাতে সহযোগিতা করছেন। একই সাথে থাইল্যান্ড ও মালেশিয়ায় মানব পাচার বৈধ করছেন। বাচিয়ে দিচ্ছেন মানব পাচারকারীদের।
বার্মায় মুসলমানদের গণহত্যার নামে শত শত ভুয়া ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ছবিগুলো অধিকাংশই শ্রীলংকার তামিল হত্যাকাণ্ড, সিরিয়া, ইয়েমেন, আফ্রিকা বা অন্যান্য অঞ্চলের বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ড কিংবা দুর্ঘটনা থেকে নেয়া। লাশ পুড়ানোর কিছু ভিডিও শেয়ারিং হচ্ছে যা তিব্বতীয় বৌদ্ধ ধর্মগুরুদের, চীন ভূমিকম্পের সময়কার, যেখানে তাঁরা সাহায্য করছিলেন। তাছাড়া ফটোশপ এ এডিটিং করা ছবি তো আছেই। আর হ্যাঁ, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বক্তব্যরত বৌদ্ধ ধর্মগুরুদের যে ভিডিওটি অনলাইনে প্রচারিত হচ্ছে তাও এডিটিং করা, এবং ২০১৩ সালের।
এইসব ভিডিও বা ছবির সাথে কিছু মন্তব্য এবং শেয়ারিং রীতিমতো ভয়ংকর, যেমনঃ বার্মায় তারা আমাদের মুসলিম ভাইদের মারছে, বাংলাদেশেও নাক বোঁচা বৌদ্ধদের মেরে বার্মাতে পাঠিয়ে দিতে হবে।
রাষ্ট্রের দায়িত্ব তো অবশ্যই, একজন মুসলমান হিসেবে বলতে পারি, বাংলাদেশের সকল অমুসলিমদের জানমাল রক্ষা করা প্রত্যেকটি মুসলমানেরও দায়িত্ব।
বার্মার পরিস্থিতি এখন কেমন?
অধিবাসী সমস্যা ছাড়া বার্মার পরিস্থিতি আগে যেমন ছিলো তেমনই। বিশ্ব মিডিয়া ঘেঁটে দেখতে পারেন কোনো ধরনের গণহত্যার খবর নেই।
তাহলে কেনো এইসব ভুয়া ছবি শেয়ারিং?
কোনো একটি গোত্র সক্রিয় ভাবে চাচ্ছে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগুক। আড়ালে আবডালে থেকে এ দেশের সরলমনা মুসলমানদের ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে চাচ্ছে। আর তা যদি হয় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফল কালে তাহলে সোনায় সোহাগা। তাছাড়া দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে রাজনৈতিক ফায়দা লাভের জন্য একটি গোত্র সর্বদা তৎপর।
বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র বানাতে পারলে তাদের সবচেয়ে বেশি লাভ, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার তখন সহজ হবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, ফেইসবুকে এইরকমই একটি ভুয়া ছবি শেয়ারিং এর ঘটনাকে কেন্দ্র করেই চট্টগ্রামের রামু’র ঘটনা ঘটেছিলো, যার ক্ষত এখনো শুকায়নি।
অনবরত ভুয়া সব ছবি শেয়ারিং দেখে মনে হচ্ছে, ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে কিছুসংখ্যক ফেইসবুকবাসী আরেকটি রামু’র পুনরাবৃত্তি ঘটানোর জন্য উদগ্রীব, আর সেটা নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ ভ্রমণ কালে হলে চমৎকার হয়!
আপনাদের একটি ব্যাপার পরিষ্কার করে বলি, মায়ানমার বা বার্মাতে সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকার। সেখানে ইন্টারনেট ব্যবহার খুবই সীমিত। সাংবাদিকতা, ফটো তোলা বা ফেইসবুকে এইসব শেয়ারিং সেখানে বাংলাদেশের মত নয়, খুবই কড়াকড়ি এবং নজরদারির ভিতর চলে। যে কোনো ধরণের হত্যাকাণ্ড ঘটলে তা ফেইসবুকে আসা প্রায় অসম্ভব। তাই যে বীভৎস ছবি দেখে আপনি আঁতকে উঠছেন তা পুরোপুরিই ভুয়া এবং অসৎ উদ্দেশ্যে ছড়ানো।
আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না??
গুগল ইমেজ সার্চের সাহায্য নিন।
কিভাবে গুগল ইমেজ সার্চ ব্যবহার করতে হয়?
গুগল ইমেজ সার্চ খুবই প্রয়োজনীয় সার্চ ইঞ্জিন। এখানে সহজেই প্রয়োজনীয় ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। আবার কোনো ছবির তথ্য সূত্র খোঁজে বের করতেও এর জুড়ি নেই। কীভাবে করবেন?
যে ছবি সম্পর্কে আপনার সন্দেহ আছে বা তথ্যানুসন্ধান করতে চান সেই ছবি ওয়েবসাইট বা ফেইসবুক থেকে ডাউনলোড করে আপনার পিসিতে সেইভ করে নিন।
কম্পিউটার থেকে https://images.google.com/ এ যান। সেখানে ক্যামেরা চিহ্নিত অংশে ক্লিক করে Upload an image এ ক্লিক করুন। ছবি Browse এর অপশনে ক্লিক করে আপনি আপনার ছবিটি আপলোড করা মাত্রই গুগল ছবিটি সম্পর্কিত সকল তথ্য আপনাকে জানিয়ে দেবে।
বুঝে না বুঝে অনেকেই বীভৎস সব ছবি শেয়ার করছেন। প্রায় সব ছবিগুলোই ভুয়া এবং অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভুয়া ছবিগুলো শেয়ারের কারণে যে কারো ফেইসবুক গ্রাফিক ভায়োলেন্স এক্টে একাউন্ট সাসপেন্ড হয়ে যেতে পারে। আমি ভয় দেখাচ্ছি না, ভুক্তভুগি অনেকেই আছেন।
আর হ্যাঁ, আরেকটি কথা না বলেই পারছি না, এইমাত্র কিছু দিন আগে ইয়েমেন এ মুসলিম দেশগুলোর হর্তা কর্তা আরেক দেশ সৌদি আরব বোমার পর বোমা মেরে হাজারো মুসলমান মেরে ফেললো। অথচ সেই ঘটনার কোনো প্রতিবাদ ফেইসবুকে দেখিনি। কেনো বলতে পারেন? কারণ এতে বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা যাবে না, তাছাড়া এক্ষেত্রে এইসব ধর্মান্ধ দলান্ধদের নেতাদের বিপদে পড়ার সম্ভাবনাও আছে।
ফেইসবুক বা ব্লগে আমরা প্রতিদিন অনেককিছুই শেয়ারিং করি। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, আমাদের ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে কেউ যেনো নিজ দলের বা গোষ্ঠীর হীন উদ্দেশ্য হাসিল না করে। ইন্টারনেট নামক চমৎকার প্রযুক্তি আপনার আছে, গুগল নামক তথ্য ভাণ্ডার হাতের নাগালে।
নিজে সতর্ক থাকুন, অন্যকেও সতর্ক রাখুন। দেশের একজন শিক্ষিত নাগরিক হিসেবে দেশ আপনার কাছে এতোটুকু তো আশা করতে পারে।